একাকী

সুদীপ ব্যাঙ্কের বার্ষিক খাতাবন্দীর কাজে কয়েকদিন ধরে ব্যাস্ত। মার্চ মাসের শেষে প্রতি বছর এই রকম বিশেষ কাজের চাপ বাড়ে। নানারকম টার্গেট, বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট মিলিয়ে রাখা ইত্যাদি। ব্যাঙ্কের ব্যালেন্স শিট তৈরি হবে। তবে CBS হবার পর থেকে বেশী ঝামেলা নেই … সুদ গণনা ইত্যাদি সিস্টেম সব করে।

সুদীপ আর দীপার একমাত্র মেয়ে দীপান্বিতা কলেজে পড়ে  অন্য শহরে। হস্টেলে থাকে। দীপা এবার বাপের বাড়ী গিয়েছে — অনেক দিন মেয়ের লেখাপড়া নিয়ে ব্যাস্ত থাকায় যাওয়া হয়ে ওঠেনি। বাবা, বৌদি, দাদা সবাই ডাকছে অনেকেদিন ধরে। তাই এবার গিয়েছে। সুদীপ নিজেই এই কথাটা দীপাকে বলেছিল। সুদীপ নিশ্চিন্তে কাজ সেরে বাড়ী ফিরবে রোজ। দেরী হলে চিন্তা নেই। নইলে খারাপ লাগে যে দীপা বসে থাকে সুদীপ আসলে তবে একসাথে খাবে।

কয়েকদিন ধরেই সুদীপের আসতে দেরী হচ্ছে। কাজে ব্যাস্ত। বাড়ীতে এসে খেয়ে শুয়ে পড়ে। দীপা রোজ রাত্রে শুতে যাবার আগে সুদীপকে ফোন করে। গতকাল সুদীপ খেয়ে এসে বসেছে। দীপার ফোন আসলে কথা বলে ঘুমোতে যাবে। ক্লান্তিতে টিভি দেখতে দেখতে চোখ লেগে গিয়েছে কখন সুদীপ টের পায়নি। আজ দুপুরে মীটিঙে মোবাইলটা সুইচ অফ করেছিলো কিন্তু মীটিং থেকে বেড়িয়ে এসে ওটা অন করতে ভুলে যায়। এদিকে যথারীতি দীপা ফোন করে। সুদীপ মোবাইল সাইলেন্ট থাকায় বুঝতে পারেনি, অবশ্য ঘুমিয়ে পড়েছিলো। তাই ঘুম ভাঙেনি আর দীপা চারবার রিং করে একটু রেগে ঘুমিয়ে পরে।

সুদীপের যখন ঘুমটা একটু ভাঙ্গে দেখে ঘরে লাইট জ্বলছে, টিভি চলছে। ঘড়িতে দেখলো দেড়টা বাজে। একটু আশ্চর্য হোল দীপা ফোন করলোনা কেন? মোবাইলটা তুলে দেখে চারটে মিসড কল! তখন দেখে যে মোবাইলটা সাইলেন্ট মোডে ছিল। তাড়াতাড়ি দীপাকে ফোন করে। দীপা তোলেনি। সে ততক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে।

পরের দিন সকালে সুদীপ যখন দীপাকে ফোন করে তখন দীপা রেগে ফোন কেটে দ্যায়, তার ফোন তোলেনি কেন বলে। সুদীপ একটু হতাশ হয়ে গেলো। সে বেচারা ক্লান্ত হয়ে, বাড়ীতে একা একা যদি একটু শুয়ে পড়ে তাতে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেলো? দীপা তো নিজের বাপের বাড়ীতে সব লোকজনের মাঝে আছে, আনন্দ করছে। এতদিন একসাথে ঘর করার পরেও দীপা সুদীপের ক্লান্তি, একাকীর কথা চিন্তা করলো না! সুদীপের মনটা একটু বিশাদাচ্ছন্ন হয়ে গেলো।

সুদীপ আবার অফিসে কাজে ব্যাস্ত তখন দীপা ফোন করে আর রাত্রে ফোন না তোলার কারণ জিজ্ঞাসা করে। সুদীপ এখন কারণ জানার প্রয়োজন নেই বলে লাইন কেটে দ্যায়।  আজকে 31 মার্চ। অনেক কাজ। সময় নেই এখন এইনিয়ে কথা বলার, বৌয়ের মানভঞ্জন করার। তার উপর মনের কোনে কোথাও একটু ক্ষোভ লুকিয়ে আছে। আছে কিছুটা অভিমান। নানা কাজের মধ্যে, অফিসে বহু লোকের মধ্যে সুদীপ আজকে নিজেকে যেন বড্ড একাকী মনে করছে।

I'd love to hear your thoughts on this post! Please leave a comment below and let's discuss.