মহাবিপ্লবী (যতীন মুখার্জি) বাঘাযতীনের মৃত্যু নিয়েও বেশ ধোঁয়াশা আছে। ১৯১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর উড়িষ্যার বালেশ্বরে বুড়িবালাম নদীর তীরে, বৃটিশ ইন্ডিয়ান পুলিশের সাথে সম্মুখ গুলির লড়াই হয়েছিল বিপ্লবী মুক্তি তাপস বাঘাযতীন চিত্তপ্রিয় রায়চৌধুরী নীরেন দাশগুপ্ত মনোরঞ্জণ সেনগুপ্ত জ্যোতিষ পালের। এই সংঘর্ষে বিপ্লবী চিত্তপ্রিয় রায়চৌধুরী শহীদ হন। বাঘাযতীন ও অন্যান্যরা মারাত্মক জখম অবস্থায় গ্রেপ্তার হন। পরের দিন ১০সেপ্টেম্বর বালেশ্বর হাসপাতালে বাঘাযতীন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
কিন্তু বুড়িবালামের তীরে এই যুদ্ধের পরেও অনেকেই বিশ্বাস করতে রাজি নন যে বাঘাযতীনের মৃত্যু হয়েছিল। অনেকেরই ধারণা বাঙালি ডাক্তারদের সহায়তায় তিনি সুস্থ হতে পেরেছিলেন। অন্য একটি মৃতদেহকে তাঁর মৃতদেহ বলে সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছিল।
বাঘাযতীনের মতো দেখতে একজন সাধুকে প্রায়ই বিভিন্ন তীর্থে দেখা যেতো। কালীঘাট দেওঘর ইত্যাদি স্থানে পরিবারের অনেকেই দেখা পেয়েছিলেন। বাঘাযতীনের সাধ্বী স্ত্রী ইন্দুবালা দেবী কোনো দিনই স্বামীর মৃত্যু সংবাদ বিশ্বাস করেননি। বিধবার বেশও ধারণ করেননি। হিন্দু ঘরের সাধ্বী স্ত্রী নিছক আবেগের বশে এমন কাজ করবেন সেইযুগে তা অসম্ভব ছিলো এবং আচার আচরণে কোনো অসংগতি লক্ষ্য করা যায়নি তাঁর। সুতরাং অনেকেরই অনুমান, বাঘাযতীন তাঁর সাধ্বী স্ত্রীকে গোপন কোনো সংকেত দিয়েছিলেন হয়তো যার জন্যই এত বিশ্বাসের সাথে ইন্দুবালা দেবী স্বামী বাঘাযতীনের মৃত্যু সংবাদ মেনে নেননি কখনও। আজীবন শাখা সিঁদুড় পরে সধবার জীবন যাপন করেছিলেন তিনি।
হিমালয়ের বিখ্যাত যোগী বাঘাযতীনের গুরু ভোলানন্দ গিরিও বারবার দাবী করতেন যে বাঘাযতীন জীবিত আছেন। হিন্দু ঘরের সংস্কার অনুযায়ী বাঘাযতীনের পুত্র কন্যারা কখনো তাঁর পারলৌকিক কাজ করেননি।
১৯৪২ সালেও কলকাতা পুলিশ বাঘাযতীনকে মোস্ট ওয়ান্টেড টেররিস্ট হিসেবে তন্ন তন্ন করে খুঁজে বেরিয়েছে। এই প্রমাণও আছে।
তাহলে? শেষ হয়েও শেষ নেই?
