লকডাউনে বউ বিভ্রাট

লকডাউনে বসে অকস্মাৎ বাসু মুখোপাধ্যায়র একটি গল্প মনে পড়ে গেলো। ফেসবুকে পড়েছিলাম।

ঠিক সকালবেলাতেই জানতে পারলাম আমি আরও একটা বিয়ে করেছি। সকাল মানে এই সাড়ে দশটা নাগাদ।

লকডাউনের সময় ঘরে কেউ আসছেই না বলতে গেলে তাই কেউ আসা মানেই বিরাট ব্যাপার। সেদিন গ্যাস-সিলিন্ডারের ডেলিভারি বয়ের সঙ্গে বউ দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও আমাদের ভবিষ্যত, এই বিষয়ে আধ ঘন্টার বেশি সময় ধরে আলোচনা করল।

তো আজ সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ দরজায় ধাক্কা। বউই গিয়ে দরজা খুলল।

আমি পরশুরাম পড়ছিলাম। হঠাৎ শুনতে পেলাম আমার বউয়ের উত্তেজিত গলা, “এ সব কী বলছেন আপনি? আপনার হাসব্যান্ড এখানে থাকে? কী নাম তার?”

একটি মহিলা কন্ঠ বলল, ” ঠিকই বলছি। আগে ওকে বেরোতে বলুন। টাকা দেয়নি কতদিন, কী কষ্টে আমি আর আমার ছেলে আছি!”

এ সব কী! কে হাসব্যান্ড? আমি?এ কোন গেরোয় পড়লাম রে বাবা! ভয়ে বুকের মধ্যে ড্রাম বাজতে লাগল।

বউ ডবল গলা চড়িয়ে বলল, “ইয়ার্কি পেয়েছেন নাকি? যা হোক তাই বললেই হল? এই ঘরে আপনার বর থাকে? ভালয় ভালয় চলে যান, নইলে পুলিশ ডাকব।”

পুলিশের কথায় একটুও ভয় পেল না মহিলা। বলল, “ডাকুন ডাকুন। নইলে আমিই ডাকব। তুমি তোমার প্রথম পক্ষের কাছে থাকো না বাবা, আমি কি বারণ করেছি? কিন্তু আমাকেও বিয়ে যখন করেছ একটা বাচ্চাও আছে, তখন খরচ-খরচা কে দেবে শুনি?”

আমি ঘরের ভেতর থেকে কম্পিত হৃদয়ে কথোপকথন শুনছি। এখন মহা বিপদে পড়লাম তো! প্রমাণ করব কী করে যে আমি বিয়ে করিনি?

যাইহোক ঘরে তো আর বসে থাকা যায় না। আমি মাস্ক পরে বেরিয়ে পড়লাম।বউ বলল, “দ্যাখো দ্যাখো কী বলছে! এই ঘরে নাকি ওর হাসব্যান্ড থাকে। মানে তুমি নাকি ওর বর!”

মেয়েটির মুখে ওড়না জড়ানো। সঙ্গে একটি বছর পাঁচেকের বাচ্চা। আমাকে দেখে বলল, “হ্যাঁ এই তো, এই আমার বর। কী গো তুমি আমায় চিনতে পারছ না? তোমার সোমলতাকে চিনতে পারছ না? তোমার বেটুকে চিনতে পারছ না?”

বউয়ের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দ্বন্দ্ব চলছে। আমি পড়লাম মহা মুস্কিলে। কী করি এখন?

বউ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে টলটল করছে জল। বলল, “কিছু বল এবার?”

আমি মাস্ক খুলে ফেললাম। করোনা হয় হোক! বললাম, “এবার ভাল করে দেখে বলুন, আমিই কী আপনার বর?”

মহিলা অর্থাৎ সোমলতা ভাল করে দেখে দু-দিকে ঘাড় নেড়ে বলল, ” না না ইনি নয়। আমার বরের এমন গোঁফ নেই।”

যাক বাবা বাঁচা গেল! গোঁফের জন্য এ যাত্রায় দ্বিতীয় বিয়ে থেকে বেঁচে গেলাম। মনে পড়ে গেলো সুকুমার রায়। “গোঁফের আমি, গোঁফের তুমি, গোঁফ কি কারোর কেনা? গোঁফ দিয়ে যায় চেনা।

বউও ফর্মে ফিরে এল। বলল, “বলেছিলাম তো আমার ঘরে আপনার বর নেই। যার তার ঘরে গিয়ে বর- বর করছে! যাও যাও, মানে মানে বিদেয় হও এবার।”

সোমলতা বলল, “একবারই দেখেছিলাম বাড়িটা। ইচ্ছে করেই ভুল বাড়ি দেখিয়ে দিয়ে ছিল নাকি কে জানে! পুরুষগুলোকে কিচ্ছু বিশ্বাস নেই! আমি না হয় দুদিন না খেয়ে আছি, অসুবিধা নেই কিন্তু এইটুকুনি বাচ্চা কি না খেয়ে থাকতে পারে?”

বউ বলল, “তুমি ঘরে যাও।”

আবার বই খুলে বসলাম। কিন্তু এক পাতাও পড়তে পারছি না। খানিকক্ষণ পরে বউ এ ঘরে এল। আমার পাশে বসে বলল, “বাব্বা ভয় পাইয়ে দিয়েছিল। আমি অবশ্য সিওর ছিলাম তোমার এত সাহস হবে না।”

আমার ‘হতে পারত দ্বিতীয় পক্ষ’র জন্য সত্যি বলতে কী একটু খারাপই লাগছে! বেচারা এখন তার স্বামীকে কোথায় খুঁজে পাবে! বাচ্চাটাও না খেয়ে আছে!

বললাম, “ওর স্বামীকে খুঁজে পাবে নাকি কে জানে! খারাপ লাগছে জানো? সত্যিই যদি টাকা পয়সা না থাকে!”

বউ বলল, “সে আমিও ভেবেছি। বাচ্চা আছে একটা। তার কী দোষ! দিয়েছি দু হাজার টাকা। অন্তত খেতে পাবে কটা দিন। আর তোমার মতোই কেউ তো এই কীর্তি করেছে। একটা কথা ঠিকই বলেছে মেয়েটা, পুরুষদের কিচ্ছু বিশ্বাস নেই।”

তারপর নরম গলায় বলল, “রোজ সেই একই খাওয়া! ফ্রিজে একটু মাংস আছে, আজ বের করে করি।”

আমি বুঝলাম, সতিন হতে হতে না হওয়ায় বউ হেব্বি খুশি হয়েছে।

পুনশ্চ – বিকেলে খবর পাওয়া গেল, ওই মহিলা এই লক ডাউনের সুযোগে আমাদের এ পাড়ায় আরও অন্তত তিনটে বাড়িতে গিয়ে এই একই নাটক করে কিছু কিছু টাকা হাতিয়েছে।

বউ ডুকরে উঠল, “হায় হায়….আমায় পুরো মুরগি বানিয়ে দিল!”

আমি বললাম, “তাহলেই বোঝো। শুধু পুরুষদের নয় মেয়েদেরও বিশ্বাস নেই।”

দু’হাজার টাকার শোকে কাতর বউ কোন উত্তর দিল না…

I'd love to hear your thoughts on this post! Please leave a comment below and let's discuss.