দীর্ঘকাল ধরে কুসংস্কার নিয়ে বহু কল্পিত কাহিনী আছে বা এমন কাহিনী আছে যা কল্পনাপ্রসূত কল্পিত কাহিনীতে পরিণত হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক জিনিসগুলির মধ্যে কালো বিড়াল সবচেয়ে কুখ্যাত। প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানুষদের বিড়াল নিয়ে একটি বড় সমস্যা ছিল। বিড়ালদের মধ্যে অনেকে ছিল এখনকার বিড়ালদের তুলনায় আকারে অনেক বড়। তদুপরি, তারা মানুষের জন্য এমনকি ক্ষতিকারক ছিল। মানুষ সবসময় খাদ্য শৃঙ্খলার শীর্ষে ছিল না। হয়তো বেঁচে থাকার জন্য বিড়ালদের প্রতি ভয় কিছুটা অপরিহার্য ছিল। এমনকি আমাদের আধুনিক জগতেও অনেকেই কালো বিড়ালকে ভয় পায়। তবে এমনও অনেক লোক আছে যারা বিশ্বাস করে যে কালো বিড়াল নিয়ে কুসংস্কারের কোন ভিত্তি নেই।
মধ্যযুগের সময় থেকে কালো বিড়ালের কুসংস্কার চলে আসছে। জার্মানে মানুষরা বিশ্বাস করত যে, কালো কাকের মত, একটি কালো বিড়াল একটি সাঙ্কেতিক চিহ্ন ছিল যে কারোর মৃত্যু শীঘ্রই ঘটবে। তারা ভাবতো যদি একটি কালো বিড়াল আপনার পথ অতিক্রম করে তাহলে এটি সঙ্কেত করছে যে আপনার দুর্ভাগ্য অবিশ্যম্ভাবী।
ভারতবর্ষে কালো বিড়ালকে নিয়ে যে একটি কুসংস্কার ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে, আশ্চর্যজনকভাবে তার উৎপত্তি ইউরোপীয় দেশগুলির থেকে। যদিও জাদুবিদ্যা এবং ডাকিনীবিদ্যা ভারতবর্ষে বহুকাল পুর্ব থেকে প্রবর্তিত আছে, তবে কালো বিড়ালগুলির সাথে তার সম্পর্কটি ব্রিটিশ এবং পর্তুগিজ উপনিবেশীদের মাধ্যমে আমাদের দেশে মূলধারায় জড়িত হয়েছে।
আমি নিজে কুসংস্কারে বিশ্বাস করিনা। আমি জানি যে কালো বিড়াল নিয়ে কুসংস্কারের কোন ভিত্তি নেই। তবে এক বিশেষ ঘটনা – যদিও সেটি কাকতালীয় – আমার অবচেতনে বিশেষ ছাপ ফেলে দ্যায়। সেই কারণে যদি কোন কালো বিড়াল আমার পথের সামনে দিয়ে চলে যায়, আমি মুহুর্তের জন্য থমকে দাঁড়িয়ে যাই সেইখানে। সেটা কিছু ভেবে নয়, একেবারে স্বত:স্ফুর্ত প্রতিক্রিয়া।
আমি তখন কলেজে পড়তাম দিল্লী শহরে। একদিন সন্ধ্যা বেলায় আমি আর আমার মা একসঙ্গে বাড়ী ফিরছিলাম। হটাৎ আমাদের সামনে দিয়ে একটি কালো বিড়াল পথ কেটে চলে যায়। আমার মা বললেন – “চল ফিরে যাই, অন্য পথ ধরে বাড়ী ফিরবো।” আমি তখন মাকে বোঝাই যে আজকালকার বিজ্ঞানের যুগে এই সব কুসংস্কারের কোন স্থান নেই। আর সেও তো একটি প্রাণী এবং আমাদের মতো তারও স্বেচ্ছায় ঘুরে বেড়াবার অধিকার আছে। ছেলের যুক্তির কাছে মা নতি স্বীকার করে এবং আমরা সেই পথ দিয়েই বাড়ী ফিরি। বাড়ী এসে আমরা ব্যাপারটা ভুলে যাই। কিন্তু সেই শেষ রাত্রে আমার বাবার মৃত্যু হয়। আমার মা সেই কালো বিড়ালকে নিয়ে কোন কথা বলেননি আমাকে, কিন্তু বহুদিন আমি তার দৃষ্টির মধ্যে যেন তার একটা আক্ষেপ দেখতে পেতাম। মনে হতো উনি বলছেন – “তোকে মানা করেছিলাম, কিন্তু তুই শুনিস নি।” নিজেকে তখন দোষী মনে হতো – আমি কি আমার পিতৃবিয়োগের কারণ?
সেইদিন থেকে যখনই কালো বিড়াল আমার পথ অতিক্রম করে, আমি স্বত:স্ফুর্ত ভাবে সেখানে ক্ষণিকের জন্য দাঁড়িয়ে যাই। এটি কি কুসংস্কার? এর উত্তর নেই আমার কাছে। এ এক অদ্ভুত মানসিক অবস্থা যার কোন যুক্তি নেই। এই নিয়ে বিশ্লেষণ করাও বৃথা।
