আজ ২০শে আগস্ট। আজ বিশ্ব মশা দিবস। হ্যাঁ, শুনতে অবাক লাগলেও দিনটা ঠিক এই ছোট্ট প্রাণীর জন্যই পালিত হয়।
কেন জানেন? ১৮৯৭ সালের এই দিনে ব্রিটিশ চিকিৎসক স্যার রোনাল্ড রস প্রমাণ করেছিলেন যে মালারিয়া আসলে স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার মাধ্যমে মানুষের শরীরে ছড়ায়। এই আবিষ্কার মানব ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ, কারণ এর আগে পর্যন্ত মানুষ জানতই না কীভাবে এই প্রাণঘাতী রোগ ছড়ায়। রসের কল্যাণেই শুরু হয়েছিল মালারিয়া প্রতিরোধ ও চিকিৎসার বিজ্ঞানভিত্তিক পথচলা। তাই তাঁকে সম্মান জানাতেই আজকের দিনটি বিশ্ব মশা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
কিন্তু বিজ্ঞানের বাইরে, মশার গল্পে আছে আরও অনেক রঙ, ইতিহাস, আর ব্যঙ্গের ছোঁয়া।
মশা মানেই মাতৃহত্যা?
মশা দেখলেই আমাদের প্রথম প্রতিক্রিয়া হয় — হাত তালি দিয়ে থেঁতলে দেওয়া। ভাবুন তো, আমরা প্রতিদিন কত মশা মেরে ফেলি। অথচ সত্য হলো— কেবলমাত্র স্ত্রী মশাই আমাদের কামড়ায়। পুরুষ মশারা দিব্যি ফুলের রস খেয়ে বেঁচে থাকে।
তাহলে আমরা যখন হাততালি দিয়ে মশা মেরে ফেলি, আসলে আমরা এক জননীর সন্তান পালনের সংগ্রাম থামিয়ে দিই। তাই কি তবে মশা হত্যা মানে মাতৃহত্যা নয়?
ইতিহাসে মশার অবদান
আপনি হয়তো ভাবছেন, “অসুবিধা তো কম নয়, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া!” — ঠিক কথা। কিন্তু একটু ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখুন।
আজকের দিনে মশাকে কেবল রোগবাহক হিসেবে দেখলেও, ইতিহাসে কিন্তু তার ভূমিকা বিস্ময়কর।
- আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট (৩২৩ BCE)— অজেয় সেনাপতি, যিনি ভারত জয় করতে এসেছিলেন। কিন্তু এক নারীমশা তাঁর শরীরে ম্যালারিয়া ঢুকিয়ে দিয়ে তাঁর বিজয়যাত্রার ইতি টেনে দেয়।
- সরাইঘাটের যুদ্ধ (১৬৭১) — অহম বাহিনী বনাম মোঘল সেনা। কেবল অস্ত্র নয়, মশারাও তখন অহমদের সহায়। মোঘল সেনাপতি মীর জুমলা ম্যালারিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন। ফলত আসাম-কামরূপ মোঘল সাম্রাজ্যের কবল থেকে বেঁচে যায়।
অর্থাৎ, ছোট্ট মশা মাঝে মাঝেই ইতিহাসের গতি বদলে দিয়েছে।
আধুনিক যুদ্ধেও মশার নাম
শুধু প্রাচীন যুগেই নয়, আধুনিক যুগেও মশাকে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছে মানুষ। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি।
১৯৫৪-৫৬ সালের মধ্যে মার্কিন সেনারা নানা পরীক্ষায় মশা ব্যবহার করেছিল। নাম শুনুন — অপারেশন বিগ-ইচ, অপারেশন মে ডে, অপারেশন বিগ বাজ, অপারেশন ড্রপ কিক! এমনকি ১৯৬৪ সালের বিখ্যাত সিনেমা Dr. Strangelove-এও এই “অপারেশন ড্রপ কিক”-এর উল্লেখ রয়েছে।
মশা & আমাদের অর্থনীতি
মশা নিয়ে আবার মজা করছেন ভাবছেন? একবার বাস্তবটা ভাবুন। এই মশার জন্যই কতো পরিবার দুবেলা খেয়ে পরে বেঁচে আছে।
অল আউট, মর্টিন, গুড নাইট — এদের ব্যবসার জোরেই হাজার হাজার মানুষ চাকরি করে। যদি হঠাৎ পৃথিবী থেকে মশা উধাও হয়ে যায়, একরাতে কতো মানুষ বেকার হয়ে পড়বেন ভেবেছেন কখনো?
তাহলে করণীয়?
তাহলে কি মশাকে মাথায় তুলে রাখতে হবে? মোটেই না। তবে হত্যা নয়, প্রতিরোধ হোক আমাদের পথ। ডেঙ্গি যতই লেঙ্গি মারুক, আমরা মশারি ব্যবহার করি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকি।
আজকের দিনে তাই শপথ নিই—
“মশা মারব না, মশারি ব্যবহার করব।”
আর শেষে একটু হাসির ছলে বলি,
“এই দুষ্টু যাহ, নইলে ফুল ছুঁড়ে মারব!”
আজকের দিনে মশাকে নতুন করে দেখুন। সে শুধু রোগবাহক নয়, ইতিহাসের পাতায় নীরব চরিত্র, বিজ্ঞানের গবেষণার এক গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠি, আর মানব সভ্যতার অদ্ভুত সঙ্গীও বটে।
শুভ বিশ্ব মশা দিবস!

কি অসাধারণ লেখা!
একটা ছোট্ট মশা যে ইতিহাস, বিজ্ঞান, যুদ্ধ, অর্থনীতি আর হাস্যরসের এত বড় চরিত্র হতে পারে—তা ভাবতেই অবাক লাগে। স্যার রোনাল্ড রসের আবিষ্কার থেকে শুরু করে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের পরাজয়, এমনকি “অপারেশন ড্রপ কিক”—সবই যেন মশার গোপন মহাকাব্য।
আর শেষে “মশা মারব না, মশারি ব্যবহার করব”—এই শপথটা তো একেবারে সোনায় সোহাগা! আজকের দিনে মশাকে শুধু বিরক্তির কারণ নয়, বরং মানব ইতিহাসের এক অদ্ভুত সঙ্গী হিসেবে দেখার চোখটা সত্যিই বদলে দিল।
শুভ বিশ্ব মশা দিবস!🦟📚
LikeLiked by 1 person
মশার মতো ক্ষুদ্র এক প্রাণী যে মানবসভ্যতার ইতিহাস, রাজনীতি, যুদ্ধ আর চিকিৎসাবিজ্ঞানের এত বড় খেলোয়াড় হতে পারে, তা সত্যিই বিস্ময়কর। ধন্যবাদ!
LikeLike
জেনে অবাক লাগলো যে মশার মতন একটি ক্ষুদ্র প্রাণীর ইতিহাসে কতখানি অবদান এবং তার ও একটা দিন আছে।
LikeLiked by 1 person
😀👍 ধন্যবাদ।
LikeLiked by 1 person
Profoundly relatable
LikeLiked by 1 person